Friday, October 8, 2010

অনন্য ভার্চুয়াল ঘটক সেনসিবল ম্যাচ

অনন্য ভার্চুয়াল ঘটক সেনসিবল ম্যাচ

সময় পরিক্রমায় ঘটকালির ধরনে পরিবর্তন এসেছে। পাত্র-পাত্রী দেখার দায়িত্ব আগে আত্মীয়স্বজন বা ঘটকদের মাধ্যমে সম্পন্ন হলেও এখন আর তেমনটি নেই। সময় বদলেছে। ব্যস্ত প্রাত্যহিক জীবনে মনের মতো জীবনসঙ্গী খুঁজে নেওয়ার সময় পাচ্ছেন না ... সমস্যা নেই! ঘটকের বদলে পাত্র-পাত্রী খুঁজে দেওয়া বা 'ম্যাচমেকিংয়ের' দায়িত্ব নিয়ে নিচ্ছে হালের বিয়েবিষয়ক ওয়েবসাইট...
লিখেছেন হাসান জাকির


'বিবাহের পৌনঃপুনিক প্রস্তাবে তাহাদের [পাত্র-পাত্রী] পিতৃপক্ষের পাকা চুল কলপের আশীর্বাদে পুনঃপুনঃ কাঁচা হইয়া উঠে, আর প্রথম ঘটকালির আঁচেই ইহাদের কাঁচা চুল ভাবনায় একরাত্রে পাকিবার উপক্রম হয়।' ঘটকালি কাজটা যে এতটাই সহজ নয় তা কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছোটগল্প 'হৈমন্তী'র এ দুটি লাইনে অনেকটাই স্পষ্ট। তবে সময় পরিক্রমায় ঘটকালির ধরনে পরিবর্তন এসেছে। পাত্র-পাত্রী দেখার দায়িত্ব আগে আত্মীয়স্বজন বা ঘটকদের মাধ্যমে সম্পন্ন হলেও এখন আর তেমনটি নেই। সময় বদলেছে। ব্যস্ত প্রাত্যহিক জীবনে মনের মতো জীবনসঙ্গী খুঁজে নেওয়ার সময় পাচ্ছেন না ... সমস্যা নেই! ঘটকের বদলে পাত্র-পাত্রী খুঁজে দেওয়া বা 'ম্যাচমেকিংয়ের' দায়িত্ব নিয়ে নিচ্ছে হালের বিয়েবিষয়ক ওয়েবসাইটগুলো! এ যেন ভার্চুয়াল ঘটক। মনের মতো পাত্র-পাত্রীর সন্ধান পেতে সেনসিবলম্যাচ ডটকম [িি.িংবহংরনষবসধঃপয.পড়স] এমনই ব্যতিক্রমী ও নির্ভরযোগ্য সাইট। 'আমাদের দেশে বেশ কয়েক বছর ধরেই পাত্র-পাত্রী খোঁজার বেশ কয়েকটি ওয়েবসাইট থাকলেও মানের এবং চাহিদার দিক দিয়ে সেগুলো ব্যবহারকারীদের প্রয়োজন মেটাতে পারছিল না। ব্যবহারকারীদের ক্রমবর্ধমান চাহিদাকে বিবেচনা করেই যাত্রা শুরু হয়েছে নতুন ভার্চুয়াল ম্যাচমেকার সাইট সেনসিবলম্যাচ ডটকমের। নান্দনিক ডিজাইন আর নতুন নতুন ফিচার নিয়ে চালু হওয়া এ ওয়েবসাইটটি চালুর অল্পদিনের মধ্যেই ব্যবহারকারীদের মাঝে ব্যাপক সাড়া ফেলতে সক্ষম হয়েছে_ জানান সাইটটির ডেভেলপার মশিউল হক শোভন।
শুরুর কথা
বিয়ের জন্য পাত্র বা পাত্রী খোঁজা সহজ করে দিতেই বাংলাদেশে যাত্রা শুরু করেছে সেনসিবল ম্যাচ ডটকম নামে এ সাইটটি। িি.িংবহংরনষবসধঃপয.পড়স ঠিকানার এ সাইটটি তৈরি করেছেন যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী কম্পিউটার প্রকৌশলী মশিউল হক। সাইটটি তৈরির প্রেক্ষাপট সম্পর্কে তিনি বলেন, বিয়ের বিষয়ে যখন মনস্থির করেছি তখন আমি যুক্তরাষ্ট্রে থাকি। এ সময় এ ধরনের একটি সাইটের প্রয়োজন বোধ করি। আমি ব্যক্তিগতভাবে উপলব্ধি করি, এ ধরনের কোনো সাইট আদৌ নেই। গত ৩ জুন রাজধানীর গুলশানের স্পেক্ট্রা কনভেনশন সেন্টারে এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়।
সাইটটির কাজ
বিয়ের আগে পাত্রের যোগ্যতা অনুযায়ী যেমন পাত্রী প্রয়োজন, তেমনি পাত্রীপক্ষেরও জানার প্রয়োজন রয়েছে ছেলে সম্পর্কে। একে অন্যের সম্পর্কে জানা-বোঝার মাধ্যমেই কেবল বিয়ের মতো একটি সামাজিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়ে থাকে। যোগ্যতা এবং চাহিদা অনুযায়ী পাত্র-পাত্রী খোঁজা নিতান্তই কম ঝক্কি-ঝামেলার নয়। ক্ষেত্রবিশেষে মাসের পর মাস কেটে গেলেও পছন্দের পাত্র-পাত্রী মেলাতে পারেন না অনেকে। দেখা যায়, পাত্রপক্ষ যেমন পাত্রী খুঁজছে, তেমনি একজন পাত্রীর অভিভাবকও এরকম একজন পাত্র খুঁজে ফিরছেন দীর্ঘদিন ধরে। কেবল একে অন্যের সঙ্গে যোগাযোগের অভাবেই তাদের 'খুঁজে ফেরা' সমস্যার সমাধান হচ্ছে না। সেনসিবল ম্যাচ ডটকম এ সাইট ব্যবহারকারীদের মাঝে যোগাযোগ স্থাপনের কাজ করছে। সাইটটি থেকে পছন্দের পাত্র-পাত্রীর ছবি, জীবনবৃত্তান্ত, পছন্দ আর প্রত্যাশাসহ পারিবারিক বিস্তারিত তথ্যও জানা যাবে। চাইলে সাইটটির মাধ্যমেই পছন্দের পাত্র-পাত্রীর কাছে মেইল পাঠানোর সুযোগ রয়েছে। পাত্র-পাত্রী বা তাদের সংশ্লিষ্ট যে কেউ এই ওয়েবসাইটে নিজেদের পরিচয় গোপন রেখে তথ্য আদান-প্রদান করতে পারবেন।
ঘটকালি বলে কথা!
ওয়েবসাইটের মাধ্যমে পাত্র-পাত্রী খোঁজা এখনও সমাজের সব পর্যায়ের মানুষের জন্য নিশ্চিত হয়নি। সংশ্লিষ্টরা জানান, যারা স্বেচ্ছাপ্রণোদিত হয়ে প্রোফাইল আপলোড করে থাকেন তাদের প্রোফাইলই কেবল অন্য ব্যবহারকারীরা দেখার সুযোগ পান। আর যারা প্রোফাইলে ছবি আপলোড করেন তারা বেশিরভাগই সমাজের উচ্চবিত্ত বা উচ্চ মধ্যবিত্ত পরিবারের। ফলে সমাজের বেশিরভাগ মানুষের সমস্যার সমাধান হচ্ছে না ম্যাচমেকার সাইটগুলোর মাধ্যমে। তবে এ ব্যাপারে সেনসিবলম্যাচ ডটকমের ডেভেলপার মশিউল হক বলেন, 'সব ধরনের পাত্র-পাত্রীর প্রোফাইল আপলোডে প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছি। এ ব্যাপারে অনেক সাড়াও পাচ্ছি। আশা করছি সেনসিবলম্যাচ সব ধরনের মানুষের চাহিদা মেটাতে সক্ষম হবে।'
যদি না থাকে ইন্টারনেট সংযোগ সুবিধা...
কারও যদি ব্যক্তিগতভাবে ইন্টারনেট সংযোগ সুবিধা না থাকে? এ প্রসঙ্গে মশিউল হক বলেন, 'তারপরও সমস্যা নেই। সেনসিবলম্যাচ ডটকমের গুলশানে রয়েছে একটি অফিস, সেখানে এ সংক্রান্ত সব ধরনের সহযোগিতা দেওয়া হয়।'
অফিসের কর্মীরাই অভ্যাগত বা তার পছন্দের যে কারও জন্য প্রোফাইল তৈরি করে ডাটাবেজে যুক্ত করে দেবেন। এরপর সেনসিবল কর্মীরা আপনার প্রোফাইলের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ পাত্র-পাত্রী খুঁজে দেবেন। এ ব্যাপারে যে কোনো সময় আপগ্রেডও জেনে নিতে পারবেন কোনো গ্রাহক। তিনি আরও বলেন, 'পুরো ব্যাপারটিতে দেশজ ঐতিহ্যকে আমরা বড় করে দেখেছি। এ কারণে গুলশানের অফিসে পুরোদস্তুর ঘটকও রেখেছি আমরা। টেকনোলজির পাশাপাশি মানবিক স্পর্শের এ এক অপূর্ব সম্মিলন।' অনেকেই তার বিবাহযোগ্য কন্যার ছবি ইন্টারনেটে দিতে রাজি নন_ এ বিষয়ে তিনি বলেন, 'শুধু ছবি কেন, যে কোনো পাত্র-পাত্রী তার যে কোনো তথ্য ইচ্ছা করলেই এখানে গোপন রাখতে পারবেন। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির অনুমতি ছাড়া ছবিসহ কোনো তথ্যই অন্য কেউ এখান থেকে দেখতে বা জানতে পারবেন না। ... এটা কোনো ডেটিং সাইট নয়, যারা বিয়ে করতে চান তাদের জন্য এটি উপযুক্ত।'
নিজেই হয়ে যান পাত্র-পাত্রী
বয়স ৭২ কিংবা ২৭, যা-ই হোক না কেন, বিয়ের জন্য বয়স কোনো বাধা নয়। প্রাপ্তবয়স্ক যে কেউ এ সাইটের সদস্য হয়ে তার জীবনসঙ্গী খুঁজে নিতে পারেন। সাইটটিতে যে কেউ নিজের বা আত্মীয়স্বজনের ছবি এবং অন্যান্য তথ্য আপলোড করতে পারেন। সাইটটিতে ঢুকে নিবন্ধন এবং ছবি আপলোড করে বিভিন্ন তথ্য যুক্ত করতে হবে। এজন্য সাইটটির হোমপেজে থাকা 'রেজিস্ট্রার ফ্রি' বাটনে ক্লিক করতে হবে। নতুন পেজে নাম এবং ই-মেইল ঠিকানা লিখে 'নেক্সট' বাটনে ক্লিক করতে হবে। পরবর্তী পেজে নাম-ঠিকানা এবং মোবাইল ফোন নম্বর লিখতে হবে। এরপর নেক্সট বাটন ক্লিক করে পরবর্তী পৃষ্ঠায় দুটি নিরাপত্তা প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে। এরপর আবার ই-মেইল ঠিকানা এবং পাসওয়ার্ড লিখে নিবন্ধন সম্পূর্ণ এবং তথ্যাবলি আপডেট করতে হবে।


No comments:

Post a Comment